হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া ইসরায়েলি হামলায় নিহত
ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের প্রধান ইসমাইল হানিয়া ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে সংগঠনটি। বুধবার হামাসের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, ইরানের রাজধানী তেহরানে তার বাসস্থানে "জায়নবাদী গুপ্ত হামলায়" এই ঘটনা ঘটে।
ইরানের প্রেসিডেন্টের শপথ অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার পর হত্যা
হামাস জানায়, ইরানের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার পর মঙ্গলবার রাতে ইসমাইল হানিয়া হত্যা করা হয়। ইরানের স্থানীয় সময় রাত দু'টার দিকে বিমান হামলা চালিয়ে তাকে হত্যা করা হয়। হামাস এই হামলার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছে, যদিও ইসরায়েলের তরফ থেকে এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।
ইরানের পাল্টা জবাবের ঘোষণা
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান এই হামলার পাল্টা জবাব দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন, "ইরান এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নেবে এবং যারা এই হামলায় জড়িত তাদের কঠিন শাস্তি দেয়া হবে।"
আন্তর্জাতিক নিন্দা ও প্রতিক্রিয়া
এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে কাতার, চীন, জর্ডান ও লেবানন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিন্দার প্রেক্ষিতে ওই অঞ্চলে সংঘর্ষ বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে শান্তি আলোচনা হুমকির মুখে পড়েছে, কারণ ইসমাইল হানিয়া ছিলেন এই আলোচনার একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি।
ইসমাইল হানিয়ার জীবন ও কর্ম
ইসমাইল আবদেল সালাম হানিয়া, যার ডাক নাম আবু আল-আবদ, জন্মেছিলেন ফিলিস্তিনি শরণার্থী শিবিরে। তিনি হামাস আন্দোলনের রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান এবং ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ সরকারের দশম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ইসরায়েল ১৯৮৯ সালে তাকে তিন বছর বন্দী করে রাখে এবং পরবর্তীতে তাকে নির্বাসিত করা হয়।
নির্বাসন ও প্রত্যাবর্তন
১৯৯২ সালে মারজ আল-জুহুর নামের ইসরায়েল এবং লেবাননের মধ্যকার একটি নো-ম্যানস-ল্যান্ডে নির্বাসিত থাকার পর তিনি গাজায় ফিরে আসেন। ১৯৯৭ সালে তিনি হামাস আন্দোলনের আধ্যাত্মিক নেতা শেখ আহমেদ ইয়াসিনের অফিসের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন।
রাজনৈতিক কার্যক্রম
২০০৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি হামাস তাকে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের প্রধানমন্ত্রী মনোনীত করে এবং একই মাসের ২০ তারিখ তাকে নিযুক্ত করা হয়। এক বছর পর ফিলিস্তিনের জাতীয় কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস হানিয়েকে তার পদ থেকে বরখাস্ত করেন।
হামাসের নেতৃত্বে
২০১৭ সালের ৬ মে থেকে তিনি হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তার নেতৃত্বে হামাস বিভিন্ন সময়ে ফাতাহ আন্দোলনের সাথে সমঝোতার আহ্বান জানিয়েছিল।
ইসমাইল হানিয়ার মৃত্যু ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি নতুন দিক উন্মোচন করতে পারে এবং এতে ওই অঞ্চলের সংঘর্ষের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
Join the conversation