বাংলাদেশে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার পেছনের কারণ

 


সম্প্রতি বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের আন্দোলন কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, ইন্টারনেট বন্ধ থাকা ও কারফিউ জারির ফলে অর্থনীতির বড় অংশ অচল হয়ে পড়েছে। এর প্রভাব হিসেবে গত দুই দিনে ডলারের দাম হঠাৎ বেড়ে গেছে, যা এখন ১২৪–১২৫ টাকায় পৌঁছেছে।

ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণ

প্রায় দুই সপ্তাহের ব্যবধানে খোলা বাজারে ডলারের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। দুই সপ্তাহ আগে ডলারের দাম ছিল ১১৮–১১৯ টাকা, কিন্তু এখন তা ১২৪–১২৫ টাকায় পৌঁছেছে। ব্যবসায়ীরা জানান, প্রবাসী রেমিট্যান্স পাঠানোর পরিমাণ কমে যাওয়ায় এবং বিদেশ থেকে মানুষের আসা কমে যাওয়ায় ডলারের সরবরাহ কমে গেছে, ফলে ডলার সংকট তৈরি হয়েছে।

রাজধানীর বিভিন্ন মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা যায়, বুধবার প্রতি ডলার ১২৪-১২৫ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। কিছু প্রতিষ্ঠানে দাম ১২৪ টাকা ৫০ পয়সাও দেখা গেছে।

রেমিট্যান্স প্রবাহে বাধা

কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে দেশজুড়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, কারফিউ ও ইন্টারনেট বন্ধ থাকার কারণে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ থমকে গেছে। ১৬ই জুলাই থেকে শুরু হওয়া আন্দোলনের ফলে ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯শে জুলাই থেকে ২৪শে জুলাই পর্যন্ত রেমিট্যান্স এসেছে মাত্র সাত কোটি আশি লাখ ডলার। অথচ মাসের প্রথম ১৮ দিনে প্রতিদিন গড়ে সাত কোটি ৯০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল।

রেমিট্যান্স সংকটের সম্ভাব্য প্রভাব

বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন যে, পরিস্থিতির রাজনৈতিক সমাধান না হলে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যেতে পারে এবং অবৈধ পথে অর্থ পাচারের আশঙ্কা বাড়তে পারে। এদিকে, কিছু ব্যাংক প্রবাসী আয়ের প্রবাহ ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে আসবে বলে আশা করছেন। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাফর আলম বলেন, "সঙ্কটকালীন সময়ে প্রবাসীরা পরিবারে বেশী অর্থ পাঠায়, যা ভবিষ্যতে ব্যাংকিং চ্যানেলে ফিরে আসবে।"

জুন মাসে রেমিট্যান্সের উচ্চ পরিমাণ

জুন মাসে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রায় চার বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছে। ওই সময় দেশে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল দুই দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১৬ শতাংশ বেশি। এর অন্যতম কারণ হিসেবে ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণে পরিবর্তন এবং উৎসব কেন্দ্রিক অর্থ পাঠানোর প্রবণতা উল্লেখযোগ্য।

ভবিষ্যৎ প্রক্ষেপণ

বিশ্লেষক আহসান এইচ মনসুর মনে করেন, রাজনৈতিক সংকট অব্যাহত থাকলে এবং আস্থা ফিরিয়ে না আনতে পারলে দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির প্রভাব বিদেশী বিনিয়োগ ও রেমিট্যান্স প্রবাহে দীর্ঘমেয়াদী নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে, হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাচারের প্রবণতা বাড়তে পারে।

বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকারকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে বিশেষজ্ঞরা।